বাঙালির হৃদয়ে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু

নুরুল আমিন।।


পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণ, উৎপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঙালি জাতিকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করেছেন। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দাসত্ব ও বঞ্চনার শিকল ভেঙে তিনি দুর্গত বাঙালি জাতিকে মুক্ত করেছেন। বিশ্বমানচিত্রে উদয় হলো স্বাধীন একটি দেশ। যার নাম বাংলাদেশ। মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্যাতিত নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের মানুষের নেতা ও বন্ধু হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। নির্যাতিত জনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বহুবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। অনেক জেল-জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তাতে তিনি পিছ পা হননি। বঙ্গবন্ধু পাহাড়ের মতো অটল নীতি, আদর্শ ও ব্যক্তিত্বের মানুষ ছিলেন। তার হৃদয়ে ছিল বাংলার মাটি ও মানুষের প্রতি অগাধ ভালবাসা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন-শোষনের অবসান হওয়ার পর নতুন করে বাঙালি জাতির ওপর চেপে বসে পাকিস্তানীদের অত্যাচার-নির্যাতন। বাঙালি জাতি সেদিন স্বাধীনসত্তা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। নিজেদের অধিকারের কথা বলতে পারেনি। দিনের পর দিন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা, অত্যাচার, অবিচার ও নির্যাতনের শিকার হতে থাকে বাঙালি জাতি। পাকিস্তান শাসনের দীর্ঘ ২৩ বছরে নির্যাতিত বঞ্চিত ও অবহেলিত বাঙালি বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায়। পরাধীন বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু ঘাতকদের হাতে শহীদ হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হয়েছে কিন্তু তার আদর্শের মৃত্যু হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ইতিহাস থেকে তার নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল। তারা মুছে ফেলতে চেয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথা ইতিহাস। ঘাতকেরা বাঙালির স্বাধীনতার আদর্শকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন বঙ্গবন্ধু। মহান আদর্শের মধ্যে বেঁচে আছেন বঙ্গবন্ধু। ধরনীর বুকে যতদিন বাংলাদেশ রাষ্ট্র থাকবে, বাঙালি জাতি থাকবে ততদিন তিনি অমর হয়ে থাকবেন। কারণ তিনি শুধু একজন ব্যক্তিই নয়, এক মহান আদর্শের নাম। যে আদর্শের কোনো মৃতু্য নেই। কবি অন্নদা শংকর বলেছেন – “যতকাল রবে পদ্মা, যমুনা, গৌরী, মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান।” বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ এক সুতায় গাঁথা এবং অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে জড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা বাংলার মানুষ কখনও ভুলবে না। যে মানুষটি নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে বাংলার মানুষকে সুখী করতে চেয়েছেন, বাঙালির মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন, বাঙালিকে মানুষ করতে চেয়েছেন! সেই মহান মানুষটাকে কী কখনও ভুলে যাওয়া সম্ভব? বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য ও চিন্তা চেতনায় বঙ্গবন্ধু এক অবিস্মরণীয় নাম। যা কখনও ভুলে যাওয়ার মতো নয়। এমনকি বঙ্গবন্ধুর ঋণ কখনও শোধ করার মতো নয়। বাংলার মাটি ও মানুষের আপনজন, ইতিহাসের রাখাল রাজা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কীর্তিমান এক মজহান পুরুষ। যিনি মরেও অমর হয়েছেন। তাইতো বাংলার আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ভালবাসায় জেগে উঠা বাঙালি শ্লোগান দেয় – এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে। মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেয়া বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মাইনাস করার শক্তি ও সামর্থ্য কারও নেই। শহীদ হওয়ার এতটা বছর পরেও তিনি মানুষের মনে অমর। বাংলার মানুষ তাকে ভুলেনি, কখনও ভুলবে না। বাংলার মাটি ও মানুষের জন্য তার অবদান অবিস্মরণীয়। বাঙালির হৃদয়ে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় মানুষ তাকে স্মরণ করে।


লেখক : নুরুল আমিন, সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। লালমোহন, ভোলা। nurulamin911@gmail.com, 01759648626.
Categories Uncategorised

1 thought on “বাঙালির হৃদয়ে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু

  1. বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই

    Liked by 1 person

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started
search previous next tag category expand menu location phone mail time cart zoom edit close